আমাদের চ্যানেলে ঘুরে আসবেন SUBSCRIBE

সেরা রোমান্টিক উপন্যাস

উষ্ণ ছোঁয়া

আদুরি পাখি ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম™

সম্মানিত ভিজিটর আসসালামুয়ালাইকুম : আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভালোবাসার গল্প, কবিতা, মনের অব্যক্ত কথা সহ শিক্ষনীয় গল্প ইসলামিক গল্প সহ PDF বই পাবেন ইত্যাদি ।

  সর্বশেষ আপডেট দেখুন →

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো | পর্ব - ০৭ | ভালোবাসার গল্প | উপন্যাস গল্প | উপন্যাস

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান 
৭.

হীম শীতল রুমে বসে মধুমিতার সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত শোভন। আজ সন্ধ্যায়ই সে তার আব্বা আম্মার সাথে সিলেট এসে পৌঁছেছে। আপাতত তারা একটা রিসোর্টে উঠেছে। আগামীকাল মধুর পরিবারের সাথে দেখা করে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে তারা। মধুমিতা শান্ত স্বরে বলে, 

“ আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তোমার ফ্যামিলি এতো সহজে আমাকে মেনে নিলো। “ 

“ মেনে না নেওয়ার মতো কি আছে? “ 

মধুমিতা জবাব খুঁজে পায় না। সে আপাতত খুব নার্ভাস। আগামীকাল দুই ফ্যামিলি মুখোমুখি এলে কি হবে তা ভাবতেই তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তার বাবাতো বেশ বিচক্ষণ মানুষ। যদি কোনো একটা লজিক দেখিয়ে বিয়েতে নাকোচ করে দেয়? না না। নেগেটিভ ভাবা যাবে না মোটেও। নাহয় পরে নেগেটিভই ঘটবে তার সাথে। 

শোভন ফোনের অপরপাশ হতে ডাকে,

“ এই মধু। “ 

“ হ্যাঁ বলো। “ 

“ আই লাভ ইউ। “ 

মধু সামান্য হেসে বলে, 

“ আম্মার রান্না করা কাচ্চির থেকেও বেশি? “ 

শোভন গাল ফুলিয়ে বলে, 

“ আমাদের ভালোবাসা মাঝে তোমার সবসময় কাচ্চিকে না টানলে চলে না? কাচ্চি যদি আমার হৃদয় হয় তাইলে তুমি সেই হৃদয়ের হৃৎস্পন্দন। “

মধু এখন শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে উঠে, 

“ ভালোই মাঞ্জা মারা শিখেছো। “ 

শোভন মাথায় হাত দিয়ে বলে, 

“ আরেএএ! এখনো বউ হয়ে আসো নি অথচ শাশুড়ির পুরান ঢাকার ভাষা শিখে গেলে। ভেরি ফাস্ট! “ 

“ আপনার সাথে থাকতে থাকতে বহু কিছু শিখে গিয়েছি শোভন সাহেব। একবার বিয়েটা হোক। তারপর দেখতে পারবেন। “

__________

শা শা বাতাসে তরীর চুল এলোমেলো ভঙ্গিতে উড়ছে। কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাতে থাকা ফোনে সম্পূর্ণ দৃশ্যটা রেকর্ড করে নিচ্ছে সে। ভিডিও করতে করতে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, 

“ আপনার এই ভালো মানুষির মুখোশ আমি টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেলবো নেতা সাহেব। “ 

সর্বদা শান্তশিষ্ট থাকা পার্থকে আজ বেশ অন্যরকম লাগছে। গায়ে জড়িয়ে থাকা শুভ্র পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে সে বেরহম ভাবে তিনটা ছেলেকে মারতে ব্যস্ত। মারতে মারতে একটা সময় তার দু'হাত রক্তাক্ত হয়ে যায়। তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা তার লোকেদের মুখে পৈশাচিক হাসি। মার খেতে খেতে তিনটা ছেলেরই প্রায় আধমরা অবস্থা। তাদের মধ্যে একজন আর্তনাদ করতে করতে পার্থর পা জড়িয়ে ধরে। নিজের জীবন ভিক্ষা চায়। কিন্তু তার এই আহাজারি পার্থর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। সে ছেলেটার নাক বরাবর এক লাথি মেরে তাকে দূরে ছিটকে ফেলে। 

এরকম দৃশ্য দেখে তরীর বেশ রাগ হয়। কিন্তু সে এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে পারে না। তিনটা ছেলেকে আরো বেশ কিছুক্ষণ মেরে পার্থ ক্ষান্ত হয়। সোজা হয়ে দু'হাত পিঠের পিছনে ভাজ করে দাঁড়ায় সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে তার। কিন্তু চেহারায় এক ফোটাও ক্লান্তির ছাপ নেই। পাশ ফিরে একজনকে কিছু একটা ইশারা করে সে। সাথে সাথে একজন ছেলে একটা পানিয়র বোতল হাতে এগিয়ে আসে। 

পার্থ কেমন ভয়ংকর এক হাসি দেয়। অত:পর বলে উঠে, 

“ অপেক্ষা কিসের? উনাদের কাজের ইনাম দেওয়া হোক তবে। “ 

পার্থর আদেশ পেতেই সেই ছেলেটা বোতলের মুখ খুলে কিছুটা পানীয় সেই তিনজনের মধ্যে একজনের হাতের উপর ছিটিয়ে দেয়। সাথে সাথে সেই ছেলেটা গগণবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গলা কাটা মুরগির ন্যায় ছটফট করতে শুরু করে। তার অবস্থা দেখে বাকি দুটো ছেলে আরো জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। 

দূর হতে এই দৃশ্য দেখে তরীর শরীর ঝিমঝিম করতে শুরু করে। বোতলের পানীয়টা যে এসিড ছিলো তা আর বুঝতে বাকি নেই তার। শরীর খারাপ লাগায় তরী এক কদম পিছিয়ে যেতে নেয়। সাথে সাথে তার পায়ে লেগে একটা ইট শব্দ তুলে সিঁড়ি ঘেঁষে নিচে পড়ে যায়। সাথে সাথে সবাই সতর্ক দৃষ্টিতে সিঁড়িঘরের দিকে তাকায়। পার্থ ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে। দূর হতে অন্ধকারে মুখশ্রী স্পষ্ট না দেখা গেলেও কেউ যে সেখানে আছে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। 

তরী আতংকে যেন জমে যাচ্ছে। এখান থেকে দৌঁড়ে যে সে বেশিদূর পালাতে পারবে না সেই সম্পর্কে সে নিশ্চিত। সেজন্য সে সাথে সাথে এইমাত্র রেকর্ড করা ভিডিওটা তূর্যর কাছে সেন্ড করে নিজের ফোনের লোকেশনটা অন করে ফেলে। এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে সে দ্রুত উল্টো দিকে ফিরে দৌঁড়ানো শুরু করে। দূর হতে সেই ছায়ামানবীকে দৌঁড়ে যেতে দেখে পার্থও তার পিছে ছুটে। 

নিজের শরীরের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে তরী দিক বেদিক ভুলে দৌড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে সে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এসেছে। লক্ষ্য একটাই। কোনোমতে দৌঁড়ে একবার এই মেইন গেট পেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠতে পারলেই হবে। কিন্তু তরী আর বেশি দূর যেতে পারে না। পার্থ বড় বড় কদম ফেলে দৌঁড়ে এসে তাকে পিছন থেকে ধরে ফেলে। 

ছায়ামানবীর একহাত পিঠের পিছে মুচড়ে ধরে তাকে নিজের দিকে ফিরাতেই পার্থ হিংস্র চোখে তাকায় তার দিকে। আজকে জোৎস্নার রাত। চাঁদের আলোয় চারিদিক আলোকিত। সেই উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় তরীর মুখ দেখে পার্থ গম্ভীর স্বরে বলে উঠে, 

“ ভুল করলেন ডাক্তার সাহেবা। “ 

ইতিমধ্যে পার্থর পিছু পিছু তার আরো কয়েকজন ছেলেপুলে দৌড়ে আসে। তাদের মধ্যে আসিফ এবং শামীমও ছিলো। তরীকে দেখতেই আসিফ বলে উঠে, 

“ খাইসে রে! এই ধানি মরিচ এনে করে? “

তরীর এই মুহুর্তে ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু সে মোটেও ভয় পাচ্ছে না। সে ঘাড় ঘুরিয়ে চারিপাশে তাকায়। পার্থর ছেলেরা চারিদিক থেকে তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ এখান থেকে পালানোর আর কোনো রাস্তা নেই। তরী সবার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পার্থর দিকে তাকিয়েই শব্দ করে হেসে উঠে। তার হাসি দেখে পার্থ ব্যতীত সবাই-ই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আসিফ নিজের পাশে দাঁড়ানো শামীমকে কনুই মেরে বলে উঠে, 

“ কিরে মামা! এইডা কি ওই ডাক্তার আপা নাকি তার রূপধারী কোনো প্রেতাত্মা? একে তো কালা জামা পড়া, তার উপর চান্দের আলোয় মুখ কেমন চিকচিক করতাসে, এখন আবার এমন শাকচুন্নির মতো হাসতাসে কেন? “ 

শামীম যদিও কখনো ভূত প্রেতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এই মুহুর্তে সে আসিফের কথাটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়েও যেতে পারছে না। তরীর হাসিটা তারও স্বাভাবিক লাগছে না। হাসতে হাসতেই তরী নিজের একহাতের কনুই দিয়ে পার্থর বুকে আঘাত করে। মুখে শব্দ না করলেও পার্থ তরীকে ছেড়ে দিয়ে ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। সব ছেলেরা পার্থর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেও পার্থ হাতের ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দেয়। তরী নিজের দু'হাত বুকের উপর ভাজ করে বলে উঠে, 

“ সরি টু সে নেতা সাহেব, কিন্তু আমি আপনার জনসেবা দেখতে খুব ইঞ্জয় করছিলাম। তাই সেটা লাইভ রেকর্ড করে অলরেডি জায়গা মতো পৌঁছে দিয়েছি। এখন আপনার জনসেবার সাক্ষী সম্পূর্ণ দেশ হবে। ব্যাড লাক ফর ইউ গাইস। “ 

কথাটা বলেই তরী আবার হাসতে শুরু করে। পার্থ দুটো বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে সে তরীর দিকে তাকায়। তরীর হাতে থাকা ফোনটাও তার দৃষ্টিগোচর হয় না। সে একপা একপা করে তরীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। নিজের ভয়ংকর রকম শীতল কণ্ঠস্বরে বলতে থাকে, 

“ আজকের পর থেকে আপনার জীবনে যা হবে তার জন্য কেবল আপনি একক ভাবে দায়ী ডাক্তার সাহেবা। “ 

পার্থকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তরী অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সে রুদ্ধস্বরে প্রশ্ন করে, 

“ মানে? “ 

তরীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পার্থ তার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে। সাথে সাথে তরী হাত পা ছোটাছুটি করতে করতে শান্ত হয়ে আসে। নিজের শরীরের ভার সম্পূর্ণটা পার্থর উপর ছেড়ে দিয়ে ঢলে পড়ে সে। কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই পার্থ একহাতে আগলে নেয়। 

__________

মুখে এক পশলা পানি এসে পড়তেই তরী সামান্য নড়ে উঠে। পিটপিট করে ধীরে ধীরে চোখ মেলার চেষ্টা করে সে। মাথা বেশ ঝিমঝিম করছে। চোখ খুলতেই সে নিজের সামনে এক চেয়ারে পার্থকে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার ছেলেপেলেরা। একপাশে সেই তিনটা ছেলের মধ্যে দু'জন বাধা অবস্থায় বসে আছে। আরেকজন হয়তো চেতনাহীন অবস্থায় পড়ে আছে। 

সাথে সাথে তরীর মনে পড়ে যায় সকল ঘটনা। সে তড়িৎ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই অনুভব করে সে নড়তে পারছে না। তার দুই হাত পিছনে নিয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা। পা দুটোও শক্ত করে দড়ি দিয়ে বাঁধা। তরী ব্যস্ত চোখে বাহিরের দিকে তাকায়। এখনো চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তারমানে এখনো সকাল হয়নি। তরী পার্থর দিকে তাকিয়ে হিংস্র গলায় বলে উঠে, 

“ লেট মি গো। নাহয় আই সুয়্যার জানে মেরে ফেলবো। “ 

আসিফ বলে উঠে, 

“ আমরা বাঁইচ্চা থাকতে আপনে ভাইয়ের কিছু করতে পারবেন না। তাই হুদাই এসব সুয়্যার মুয়্যার বইলেন না তো। নিজেই মিথ্যা কসম খাইয়া মইরা যাইবেন। “ 

তরী সাথে সাথে আসিফের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আসিফ সাথে সাথে চুপসে যায়। পার্থ তরীর কথার প্রতুত্তর করে না। সে নিজের হাতে থাকা তরীর ফোন হতে কাউকে কল করে ফোনটা স্পিকারে দেয়। মুহুর্তেই কল রিসিভ হয়ে অপরপাশ থেকে একটি উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, 

“ আপি? তুই ঠিক আছিস? কতক্ষণ ধরে কল করছি তোকে। তুই বেরিয়েছিস ওখান থেকে? “ 

পার্থ শান্ত গলায় বলে, 

“ তোমার আপি আপাতত আমার কাছে। “ 

তরী চেঁচিয়ে বলে উঠে, 

“ ছোট তুই তাড়াতাড়ি আমার পাঠানো ভিডিও নিয়ে পুলিশকে দে। এই স্ক্রাউন্ডেলের কথায় কান দিবি না। “ 

পার্থ চোখ পাকিয়ে তরীর দিকে তাকায়। রাগী স্বরে বলে উঠে, 

“ আমার কথার মাঝে অন্য কারো চেঁচামেচি আমার পছন্দ নয়। “ 

কথাটুকু বলেই সে আসিফকে ডেকে বলে, 

“ এই আসিফ। ম্যাডামের মুখে টেপ মার তো। “ 

পার্থর আদেশ দিতে দেরি কিন্তু আসিফের কাজ করতে নয়। ওদিকে ফোনের অপরপাশ হতে তূর্য লাগাতার চেঁচাচ্ছে, 

“ পার্থ মুন্তাসির চৌধুরী। আই'ল কিল ইউ। আমার আপিকে ছেড়ে দে। আই অলরেডি হ্যাভ প্রুভ এগেইন্সট ইউ। তোর লাইফ শেষ করতে আমার এক মিনিটও সময় লাগবে না। “ 

পার্থ বিরক্তি মিশ্রিত সুরে বলে, 

“ তোমরা দু'জন যে আপন ভাই বোন তা নিয়ে আমার আর কোনো সন্দেহ নেই। দুজনেই খালি মারার হুমকি দিতে পারো। কিন্তু ব্রেইন ইউজ করতে জানো না। ব্রেইনলেস। “ 

তূর্য আরো রেগে যায়। সে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠে, 

“ আমার বোনের গায়ে একটা টোকাও পড়লে তোর পুরা গুষ্টিকে আমি হাজতে পাঠাবো। “ 

“ তোমার বোন এখন কিরকম ট্রিটমেন্ট পাবে সেটা তোমার হাতে। “ 

“ মানে? “ 

“ আমার কয়েকজন লোক তোমার বাসার সামনে অপেক্ষা করছে। চুপচাপ কোনো শব্দ না করে দরজা খুলে দাও। ওরা কেবল প্রমাণটা মিটিয়ে চলে আসবে। তোমার বোনের গায়ে একটা ফুলের টোকাও পড়বে না। “ 

পার্থর কথা শুনে তরী মাথা নেড়ে না না বলতে থাকে কেবল। সে চায় না এতদূর অব্দি এসে প্রমাণ জোগাড় করে এখন হার মানতে। পার্থ আবার বলে উঠে, 

“ খুব ইজি একটা ডিল। হয় মেনে নাও, নাহয় তোমার বোনের লাইফের গ্যারান্টি আমি দিতে পারছি না। “

তূর্য ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠে, 

“ ইউ কান্ট ব্ল্যাকমেইল মি। “ 

“ ইয়েস আই ক্যান। তোমার বোন আপাতত আমার জিম্মিতে সেটা ভুলে যেও না। “

তূর্য দ্বিধায় পড়ে যায়। এই কেসটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে যদি একবার এই প্রমাণটা নিউজে আনতে পারে এতে করে তার ক্যারিয়ারে অনেক লাভ হবে। কিন্তু নিজের বোনের জীবনও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তার বোনের জীবনের মূল্যে সে কখনোই এরকম একটা কাজ করবে না। তূর্য প্রশ্ন করে, 

“ এই প্রমাণ মিটে গেলেই যে আমার বোন সেফ থাকবে তার গ্যারান্টি কি? “ 

“ আমি তোমায় এখানে কোনো গ্যারান্টি কার্ড দিবো না। ইউ হ্যাভ টু ট্রাস্ট মি। কারণ তোমার কাছে আর অন্য কোনো রাস্তা নেই। “ 

তূর্য রাগে একহাতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে। আপি সবসময় ঠিকই বলতো। এই পলিটিশিয়ানরা হলো মানুষ রূপী পিশাচ। এরা জনসম্মুখে এক, আর পর্দার আড়ালে আরেক রূপ নিয়ে চলে। আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে তূর্য বলে, 

“ আমি রাজি। কিন্তু আমার বোনের কোনো ক্ষতি হলে কিন্তু আমি কাউকে ছেড়ে দিবো না। “ 

পার্থ মৃদু হেসে বলে, 

“ চিন্তা করো না। ডক্টর সাহেবা একদম নিরাপদে থাকবে। “ 

তূর্য নিঃশব্দে উঠে গিয়ে নিজের বাসার মেইন গেট খুলে দেয়। মুহুর্তেই তার বাসায় প্রবেশ করে চার পাঁচজন ছেলে। তাদের একজন তূর্যর হাত থেকে ফোন নিয়ে সবার আগে সেই ভিডিও ডিলিট করে। অত:পর সেই ভিডিও অন্য কোথাও সেন্ড করা হয়েছিলো কিনা সেই হিস্ট্রি চেক করে নেয়। যখন নিশ্চিত হয় এই ভিডিওর আর কোনো কপি নেই তখন তারা পার্থকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, 

“ ভাই। কাজ হইসে। “ 

“ তোরা এখন যা তাইলে। “ 

তূর্য নিজের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠে, 

“ এখন আমার আপিকে যেতে দে। “ 

পার্থ হাসে। অত:পর ফিসফিসিয়ে বলে, 

“ হুশ? এতো বোকা নাকি? আমি এখন তোমার বোনকে যেতে দিলে যে তোমরা আমার বিরুদ্ধে পুলিশে কিছু বলবে না তার গ্যারান্টি কি? “ 

তূর্যর ধৈর্য্যের সীমা ভেঙে যায়। সে একটা গালি দিয়ে বলে উঠে, 

“ তুই যা বলেছিস আমি মেনে নিয়েছি। এখন চুপচাপ আমার আপিকে যেতে দে। “ 

“ তোমার বোন একটা মস্ত বড় ভুল করেছে তূর্য। সেই ভুলের মাশুল এখন তার লাইফটাইম গ্যারান্টি দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। তোমার মুখ যেন বাকি জীবনের জন্য বন্ধ থাকে সে জন্য তোমার বোনকে আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করবো। আমার লাইফ বরবাদ করতে আসলে আমি তোমার বোনকেও বরবাদ করে দিবো। “ 

কথাটা বলেই পার্থ ফট করে কল কেটে দেয়। তরী কোনো শব্দ না করতে পারলেও সে চোখ দ্বারা প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। পার্থ ইশারা করতেই আসিফ তরীর মুখ থেকে কোচ স্টেপ খুলে দেয়। সাথে সাথে তরী চিল্লিয়ে উঠে, 

“ আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড? আমি মরে যাবো কিন্তু এই বিয়ে করবো না। আমি কারো হাতের পুতুল না। “ 

পার্থ উঠে দাঁড়িয়ে তরীর দিকে এগিয়ে আসে ধীরে ধীরে। আর বলে উঠে, 

“ সেটা আপনার আমার ব্যাপারে নাক গোলানোর আগে ভাবা উচিত ছিলো। “ 

তরীর এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে এক লাত্থি মেরে পার্থর মুখের ভৌগোলিক চিত্র বদলে দিতে। কিন্তু তার হাত পা বাঁধা থাকায় সে এটা করতে না পেরে রাগে ফোস ফোস করছে। যেন সুযোগ পেলেই পার্থকে ছোবল মেরে বসবে সে। আসিফ এই দৃশ্য দেখে পার্থর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে, 

“ ভাই। ইউ ডিজার্ভ বেটার। এই ফণা তোলা বেডি মাইনষেরে কেম্নে আমি নিজের ভাবী হিসাবে মাইন্না নিমু? “ 

পার্থ গরম চোখে তাকাতেই আসিফ চুপ হয়ে যায়। মনে মনে বলে, 

“ মাইনষের ভালা চাওয়াই উচিত না। কেউ যদি সাইধ্যা কুমির ভর্তি খালে লাফ দেয় তাইলে আমারই বা তাতে কি করনের আছে? “ 

আসিফের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পার্থ অগ্নি দৃষ্টি তরীর দিকে তাক করে বলে, 

“ বিয়ে তো আপনাকে করতেই হবে। আদারওয়াইজ… “ 

কথাটা বলেই পার্থ নিজের পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে তরীর মাথায় তাক করে। মুহুর্তেই পুরো পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যায়। পার্থর কাছে যে লাইসেন্স প্রাপ্ত রিভলবার রয়েছে তা কারো অজানা নয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনো তা ইউজ করতে দেখেনি তারা। এই প্রথম পার্থর হাতে এটা দেখে তারা সবাই-ই আতংকিত হয়ে পড়ে। 

কিন্তু তরী আতংকিত হয় না। সে ক্ষিপ্ত চোখে পার্থর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, 

“ জানোয়ার বিয়ে করে নিজের জীবন ধ্বংস করার থেকে মরে যাওয়া বেশি সহজ। “ 

তরীর কথা শুনে পার্থ হাসে। হাসতে হাসতে সে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। রিভলবারটাও নামিয়ে নেয়। অত:পর বলে, 

“ আপনার যে নিজের জীবনের মায়া নেই তা আপনার কর্মকান্ড দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু অন্যের জীবনের মায়া নিশ্চয়ই আছে আপনার। আফটার অল ইউ আর এ ডক্টর। “ 

কথাটা বলেই পার্থ সেই তিনটা ছেলের মধ্যে একটা ছেলের দিকে রিভলবার তাক করে। আর বলে উঠে, 

“ আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে এখানে কাজী এসে উপস্থিত হবে। যদি চুপচাপ কবুল না বলেন, আর কোনো নাটক করেন তাহলে সর্বপ্রথম আমি এই তিনজনকে আপনার চোখের সামনে মারবো আমি। অত:পর আপনার ভাইয়ের কাছে নিজের লোক পাঠিয়ে তাকে মারবো আমি। আর সবশেষে এখানে উপস্থিত সেই কাজীকেও মারবো আমি। নাও দ্যা ডিসিশন ইজ আপ টু ইউ। কি চান আপনি? পার্থ মুন্তাসির চৌধুরীর স্ত্রীর ট্যাগ চান নাকি পাঁচটা মানুষের জীবন? আই সুয়্যার, আপনি যা চাইবেন তাই হবে। ‘’ 

পার্থর কথা শুনে তরী থমকে যায়। ভিতরে ভিতরে পার্থর প্রতি তার ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারণ করছে। এই মানুষটাকে তার ভস্ম করে দিতে মন চাচ্ছে। নিজের ভিতরের থমকে যাওয়া টুকু আড়াল করে কেবল ঘৃণাটুকু প্রকাশ করে বলে, 

“ আই উইল মেক ইউ রিগ্রেট দিস ডে টিল দ্যা লাস্ট ব্রিথ অফ ইউর লাইফ। “ 

__________

পার্থ ফোন কাটার পর থেকে তূর্য বেশ কয়েকবার আবার কল করার চেষ্টা করে। কিন্তু ফোন এখন বন্ধ জানাচ্ছে। তূর্য ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে পার্থর কথা। পৃথা কি গর্ব করে নিজের বড় দা'র কথা তাকে বলছিলো। মেয়েটা কি নিজের ভাইয়ের আসল রূপ সম্পর্কে অবগত নয়? 

নিজের আপির চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই তূর্য শান্ত হয়ে যায়। মনে মনে নিজেকে স্থির করে। এই পরিস্থিতিতে তার এখন ঠান্ডা  মাথায় যা করার করতে হবে। তূর্য কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে পৃথার নাম্বারে কল করে। ফোন রিসিভ হতেই তূর্য কোনো ভনিতা না করে প্রশ্ন করে, 

“ ডু ইউ ট্রাস্ট মি পৃথা? “ 

চলবে… 

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো | পর্ব - ০৭ | ভালোবাসার গল্প | উপন্যাস গল্প | উপন্যাস এই পোস্ট টি পড়ার জন্য। আপনাদের পছন্দের সব কিছু পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
A+
A-
দুঃখিত লেখা কপি করার অনুমতি নাই😔, শুধুমাত্র শেয়ার করতে পারবেন 🥰 ধন্যবাদান্তে- আদুরি পাখি