আমাদের চ্যানেলে ঘুরে আসবেন SUBSCRIBE

সেরা রোমান্টিক উপন্যাস

উষ্ণ ছোঁয়া

আদুরি পাখি ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম™

সম্মানিত ভিজিটর আসসালামুয়ালাইকুম : আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভালোবাসার গল্প, কবিতা, মনের অব্যক্ত কথা সহ শিক্ষনীয় গল্প ইসলামিক গল্প সহ PDF বই পাবেন ইত্যাদি ।

  সর্বশেষ আপডেট দেখুন →

প্রিয়ানুভব | পর্ব - ০১ | রোমান্টিক গল্প | উপন্যাস | ভালোবাসার মন জুড়ানো গল্প | Aduri Pakhi - আদুরি পাখি

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
"আম্মা, কয়ডা টেকা দান করেন। নামাজে দোয়া করমু। আল্লাহ আপনেরে দানের দশগুণ ফিরাইয়া দিব।"  

অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চমকে উঠল প্রিয়া। ওর সামনে একজন বয়স্ক ভিখারি থালা পেতে দিয়েছে। ঠোঁটে সরল, বিগলিত হাসি। প্রিয়া পার্স খুলে দেখল একবার৷ সঙ্গে সঙ্গে মুখ কালো হয়ে গেল তার। মুখ তুলে বলল,
"দান করতে না পারলে দোয়া করবেন না, চাচা?" 

ভিখারি লোকটি বোধহয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। বোধহয় ইতোপূর্বে কেউ এধরনের কথা তাকে বলেনি। বলল, 
"সবার লইগ্যাই দোয়া করি, আম্মা। দোয়া করতে তো টেকা লাগে না। তয় দান করলে আল্লাহ তার বান্দারে আরো বেশি ফেরত দেয়।" 

"মাফ করবেন, চাচা। আমার কাছে টাকা নেই।" 

লোকটির আচরণ বদলে গেল হঠাৎ। কর্কশ স্বরে বলল, "দিতে পারবেন না তো দেরি করাইলেন ক্যা? হুদাই সময় নষ্ট।" 

লোকটি রুষ্টভাবে চলে গেল। প্রিয়ার মন খারাপ হলো। এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় হাঁটা ধরে। পরিবারের আদরের বলয় থেকে বের হবার পর থেকেই মানুষ চিনতে শুরু করেছে সে। বুঝতে শিখছে স্বার্থ ছাড়া এ জগতে কেউ কারো নয়। সেখানে ভিখারি লোকটার আচরণে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।

সকালের নরম রোদ মাথায় নিয়ে একটি ছয়তলা বাড়ির সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় প্রিয়া। অনেকটা পথ হেঁটে আসার ফলে তার দেহ পরিশ্রান্ত। ঘাড়, গলা ঘামে জবজব করছে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। অনবরত ঢোক গিলে ঘাড় উঁচিয়ে বিল্ডিংটা দেখল সে। এই বিল্ডিংয়ের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে কর্মজীবী দম্পতি বাস করে। তাদেরই পাঁচ মাসের বাচ্চার কেয়ারটেকার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে অষ্টাদশী প্রিয়া। জীবনে যাকে জল গড়িয়ে খেতে হয়নি আজ সে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে এসেছে। নিয়তিতে এ-ও ছিল তার জন্য! তীব্র বেদনা, সংকোচ ও অস্বস্তি বুদ করে ফেলেছে নাজুক মেয়েটিকে। 
প্রিয়া একটু জড়োসড়ো হয়ে পা বাড়ায় ভেতরে। লিফটে করে পৌঁছে যায় থার্ড ফ্লোরে। লিফট থেকে বেরিয়ে যত সামনে এগোয় খেয়াল করে অদ্ভুত জড়তা তাকে গ্রাস করে ফেলছে। কান্না চাপে গলায়। কলিং বেলে চাপ দিতে গিয়েও হাত কেঁপে উঠল। কোনোদিন কী দুঃস্বপ্নেও ভেবছিল এভাবে অন্যের দ্বারে কাজের জন্য আসবে? হায় নিয়তি! প্রিয়া একবার ভাবে ফিরে যায়, পরক্ষণেই মা-বোনের কথা চিন্তা করে দমে যায় মন। ইচ্ছের চেয়েও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতে হবে তাকে। প্রিয়া মুখ ফুলিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে। এরপর দৃঢ় হাতে কলিংবেল চাপে। দরজা খুলতে মিনিটখানেক সময় লাগল। পরিচিত মুখটাই দেখতে পেল সে। অন্তরা মিষ্টি হেসে বলল,

"তুমি এসেছো?"

প্রিয়া এ ধরনের কথায় বিরক্তবোধ করে। চোখের সামনে একজনকে দেখেও জিজ্ঞেস করে এসেছে কিনা! তবে এখন তার বিরক্তির ধার কেউ ধারবে না। তাকেই অন্যের বিরক্তি সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। নম্র ও ক্ষীণ স্বরে বলল,

"এলাম।"  

"ভেতরে এসো।" 

বোঝা গেল বাড়ির কর্ত্রী ভীষণ ব্যস্ত। ভেতরে আসতে বলেই ছুট দিয়ে কোথাও চলে গেল। প্রিয়া আড়ষ্টভাবে চারিদিকে তাকায়। তিন কামড়ার বিশাল ফ্ল্যাট। দেয়ালে দেয়ালে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রিয়ার মনটা হঠাৎ অতীতের টানে ভার হয়ে আসে। তবে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অন্তরা চুল বাঁধতে বাঁধতে ফিরে এসে বলল,

"এ বাড়িতে সংকোচ কোরো না। তুমি ভালো ফ্যামিলির জেনেই আমার ছেলেকে তোমার জিম্মায় রাখতে চেয়েছি। ও বেশি জ্বা'লাতন করে না। শুধু একটু টাইমলি খাইয়ে দেবে। চোখে চোখে রাখবে। তুমিও হাত-পা ছড়িয়ে থাকতে পারবে। এসো, তোমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে যাই। আজ থেকে কাজে লাগতে পারবে?" 

"পারব।"

"খুব উপকার হলো।" 

বলে অন্তরা প্রিয়াকে মাস্টার বেডরুমে নিয়ে গেল। বিছানায় ঘুমিয়ে আছে পাঁচ মাসের একটি শিশু। প্রিয়ার কাজ তাকে টেককেয়ার করা। অন্তরা একটি প্রাইভেট ব্যাংকে জব করে। বাচ্চাকে এতদিন অন্তরার মা দেখে রেখেছিল। তিনি অসুস্থ হওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে চাকরিজীবী দম্পতিকে৷ অতঃপর পরিচিতের মারফতে এই ফুটফুটে মেয়েটিকে ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেল। খুবই সরল স্বভাবের মেয়ে। সিসিটিভি ফুটেজও লাগানো আছে পুরো বাড়িতে। কাজেই ভয়ের কোনো কারণ নেই। অন্তরা বাচ্চার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বলল,

"কোনোকিছু না বুঝলে মায়ের থেকে জেনে নিয়ো। মা তো অসুস্থ, যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে আমাকে ফোন কোরো। তাছাড়া অনু থাকলে তোমার ঝামেলা কম। বাচ্চাটা অনুর খুব ন্যাওটা। দক্ষিণের রুমটা অনুর। ইমারজেন্সি দরকারে ওকে ডাকবে যদি বাসায় থাকে, কেমন? আমি আসি। তোমার ওপর ভরসা করে গেলাম কিন্তু।"

অন্তরা যাওয়ার আগে প্রিয়ার দুই হাত চেপে ধরে ভরসার স্থানটা বুঝিয়ে দিয়ে গেল। 

প্রিয়া সদর দরজা আটকে দিতেই ভেতরের ঘর থেকে ডাক ভেসে এলো। জীর্ণ, ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠ। প্রিয়া অনুমান করে নিল অন্তরা আপার আম্মা ডাকছে। গিয়ে দেখল সত্যিই তাই। বৃদ্ধা জয়নব পা ভাজ করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ছিলেন। প্রিয়া যেতেই তাকে আপাদমস্তক জহুরির চোখে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

"তুমিই নতুন মেয়ে?"

"জি।" প্রিয়া বৃদ্ধার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে একটু সংকুচিত হয়ে যায়। 

"আগে কোথায় কোথায় কাজ করেছো?" 

"কোথাও না, আন্টি।" 

"মানে এটাই প্রথম?" 

"জি।" 

"হায় হায়! অন্তরা এমন আনকোরা মেয়ে ধরে এনেছে? এই মেয়ে তোমার বিয়ে হয়েছে?"

প্রিয়া দুদিকে ঘাড় হেলায়, "জি না।" 

"তাহলে বাচ্চার যত্নের তুমি কী বুঝবে? হায় কপাল!" 

"জি, আমি পারব। আমার ছোটো বোনকে আমিই নিজের হাতে বড়ো করেছি।"

জয়নব ভীষণ অসন্তুষ্টির সঙ্গে ধমক দিলেন। সদ্য কাজে যোগ দেওয়া প্রিয়ার আঠারো বছরের স্বল্পদৈর্ঘ্য জীবনে অপরিচিতের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম ধমক। জয়নব বললেন, 
"অত জি জি করো কেন? জি হুজুরি করা চো'রের লক্ষণ। তারওপর কাজের লোকেদের মাঝে একটু চো'র চো'র ব্যাপার থাকে। এরা ছোটো থাকতেই হাত সাফাই শিখে যায়। এরপর বড়োলোকের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে করতে লোভের বশবর্তী হয়ে সেই সাফাই বিদ্যা কাজে লাগায়। তা তুমি বোনকে বড়ো করেছো কেন? মা নেই?" 

প্রিয়া উত্তর দেওয়ার আগে তিনিই আবার বললেন,
"ওহহ তোমাদের মায়েরাও তো বাচ্চা নাড়ি থেকে আলাদা হওয়া মাত্রই তাকে ফেলে কাজে ছুটে যায়। আর বাচ্চা মাটিতে গড়াগড়ি করে বড়ো হয়।"
 
"জি না। আমার মা আপনার মতোই অসুস্থ মানুষ। হাটাচলা করতে পারেন না।" 

"ওহহ আচ্ছা। তাহলে সংসার কে চালিয়েছে?" 

"আমার বাবা।" 

"তোমার বাবাও আছে? আমি তো জানি এই জাতের সংসার বাচ্চা পেটে ঢোকা অবধিই টিকে থাকে। এরপর জামাই লাপাত্তা। সংসার টানে মায়েরা। এজন্যই দেখো না কাজের লোক বেশিরভাগ জামাই খেদানো বাচ্চাওয়ালা হয়। হা হা!" 

প্রিয়া চুপ রইল। অন্তরা আপার মা তাকে অপমান করছে কিনা নিশ্চিত না হলেও মহিলা যে বাচাল এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইল না। প্রিয়া স্বল্পভাষী। কাজেই বেশি কথা তার মুখ থেকে বের হলো না। অবশেষে বৃদ্ধা একঝুড়ি আলাপ খান্ত দিয়ে বললেন,
"যাইহোক, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। কথা যত কম বলবে ততই ভালো। আজকাল তো মেয়েরা কাজ করতে এসে এমন চোপা করে যেন আমরা নয় ওরাই আমাদের কাজ করে দয়া করে দিচ্ছে। আরো ভালো লেগেছে তুমি কামের বেটিদের মতো আঞ্চলিক টোনে কথা বলো না। নাহলে আমার নাতিও ওইসব টোন শিখে ফেলত।"

তখনই বাচ্চাটার কান্নার শব্দ কানে বিঁ'ধল। কারো কান্নার শব্দ এত মধুর হয় তা এই মাত্র প্রিয়া অনুধাবন করতে পারল। বৃদ্ধার কবল থেকে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ মিলতেই সে পাতলা দেহটিকে নিয়ে পাখির মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল।
____________

ছোটো পুতুলের মতো বাচ্চাটাকে সামলানো প্রথম প্রথম প্রিয়ার কাছে সহজ মনে হলেও একটু সময় যেতে বুঝল আদতে তা সহজ নয়। বাচ্চা নতুন মুখ ও নতুন কোলে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে একটু পর পরই অস্থির হয়ে কেঁদে উঠছে। বাচ্চার ডায়পার বদলাতে গিয়ে পড়ল আরেক বিপদে। ডায়পার শেষ। নতুন কোনো প্যাকেট তোলা আছে কিনা প্রিয়াকে বলা হয়নি। সে অন্তরার মায়ের কাছে জানতে গিয়ে দেখল তিনি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। প্রিয়া অবশেষে অন্তরাকে কল দিল। অন্তরা ব্যস্ত স্বরে কোনোমতে বলল,

"ডায়পার শেষ আমার খেয়াল ছিল নাগো। অনু তো বাড়িতেই আছে আজ। ওকে বলো বাইরে থেকে এনে দিতে।" 

ফোন কেটে গেল। প্রিয়া গেল সেই দক্ষিণের বন্ধ দরজার সামনে। ঠক ঠক শব্দ তুলল বেশ কয়েকবার। প্রায় পাঁচ মিনিট পর এক অতিশয় সুদর্শন যুবককে দরজা খুলতে দেখে প্রিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে দুই পা পিছিয়ে গেল। যুবকের চোখে ঘুম, কপালে বিছিয়ে থাকা চুলের আড়ালে বিরক্তির গাঢ় ভাজ। ঢুলুঢুলু চোখে চেয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
"কী চাই?" 

প্রিয়া নিজেকে সামলে বলল,
"অনু আপুকে ডেকে দিন না একটু। বাচ্চার ডায়পার কিনতে যেতে বলেছে অন্তরা আপা।" 

আচমকা যুবকের মুখের রঙ বদলাতে দেখা গেল। ঘুম ঘুম চোখের রক্তাভ আভাটা রাগ নাকি নিদ্রার রেশ ঠিক ঠাহর করা গেল না। গমগমে স্বরে বলল,
"অন্তরা ভাবী পাঠিয়েছে তোমায়?"

"হ্যাঁ।" 

"উনাকে গিয়ে বলো অনু ম'রে গেছে। এখন তার অন্তিম সংস্কার চলছে।" 

ধরাম করে দরজা আটকে গেল। প্রিয়া কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে এরপর যুবকটির কথা মতোই কাজ করল। অন্তরাকে পুনরায় ফোন দিয়ে বলল,
"আপা, একটা লোক দরজা খুলে বলল অনু আপু নাকি ম'রে গেছে। এখন অন্তিম সংস্কার চলছে।" 

অন্তরা কপাল চাপড়ে হেসে বলল,
"অনু আপু হতে যাবে কেন মেয়ে? আরে ওই ছেলেই তো অনু, মানে অনুভব। আমার দেবর। আমি আদর করে অনু ডাকি।"

প্রিয়া থ বনে গেল। প্রত্যুত্তরে কী বলা উচিৎ বুঝে পেল না। বুঝল না দোষটা অন্তরার বলার ধরনে নাকি তার বোঝার। অন্তরা বলল,
"আচ্ছা, তুমি বাবুর কাছে থাকো আমি ওর সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।"  

প্রিয়া ফোন কেটে ফিক করে হেসে ফেলল। পিছু ফিরেই চকিতে খেয়াল করল অনুভব দরজায় দাঁড়িয়ে জ্বলজ্বলে চোখে তাকেই দেখছে। যেন এক হিং'স্র প্রাণী শিকার পেয়েছে। প্রিয়া চুপসে গেল। হাসিটা তখনও তার মনের দেয়ালে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।

চলবে...

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয়ানুভব | পর্ব - ০১ | রোমান্টিক গল্প | উপন্যাস | ভালোবাসার মন জুড়ানো গল্প | Aduri Pakhi - আদুরি পাখি এই পোস্ট টি পড়ার জন্য। আপনাদের পছন্দের সব কিছু পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
A+
A-
দুঃখিত লেখা কপি করার অনুমতি নাই😔, শুধুমাত্র শেয়ার করতে পারবেন 🥰 ধন্যবাদান্তে- আদুরি পাখি